করোনার এই সময়ে গর্ভবতীদের খাবার রুটিন কেমন হবে |||

প্রেগন্যান্ট অবস্থায় যে খাবারগুলো খাওয়া উচিৎ :
    
★★প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

চর্বিহীন মাংস, মুরগী, মাছ, ডিম, ডাল (মটরশুঁটি, মসূর ডাল) ইত্যাদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান। সপ্তাহে ২ দিন বা তারচেয়েও বেশি মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন। তৈলাক্ত মাছ বা সামুদ্রিক মাছ সপ্তাহে ১ দিন খেতে পারেন। আমিষ জাতীয় খাবার গর্ভের শিশুর শরীরের নতুন টিস্যু গঠনের জন্য সাহায্য করে।প্রতিদিনের আমিষের অভাব পূরণে ২ থেকে ৩ টুকরো মাছ, ৩ থেকে ৪ টুকরো মাংস ও কমপক্ষে একটি ডিম খেতে হবে। এছাড়া নিয়ম করে প্রতিদিন একগ্লাস উষ্ণ গরম দুধ পান করতে হবে।একজন গর্ভবতী মায়ের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় trimester-এ প্রতিদিন যথাক্রমে ১, ৯ ও ৩১ গ্রাম অতিরিক্ত প্রোটিন প্রয়োজন হয়।তবে খেয়াল রাখতে হবে কাঁচা বা আধা সিদ্ধ মাংস খাওয়া যাবে না এবং ডিম ভাল করে সিদ্ধ করে বা ভেজে খেতে হবে।আর দুধ ভাল মতো ফুটিয়ে পান করা উচিত ।

★★ক্যালসিয়াম


গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি৷ গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য অনেক ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়৷ যদিও গর্ভাবস্থার প্রথম থেকেই স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় তুলনামূলকভাবে ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেড়ে যায়, তবুও শেষের ৩ মাস চাহিদাটা সবচেয়ে বেশি থাকে।একজন গর্ভবতী মায়ের দিনে ১০০০ মিলিগ্রাম এবং বিশেষ করে শেষ ৩ মাসের প্রতিদিন ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। দুধ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, মাছ, বাদাম, কমলালেবু, শুকনো ফল, সবুজ পাতাসহ শাক-সবজি, ফুলকপি ও তৈলবীজ খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে ৷

★★আয়রন


আমাদের দেশের বেশির ভাগ গর্ভবতী মহিলাই রক্তাল্পতায় ভুগে থাকেন৷ গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে রক্তের চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যায়৷ আয়রন শরীরে হিমোগ্লোবিন ও এনার্জি তৈরিতে সাহায্য করে, গর্ভস্থ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্নায়ুতন্ত্র বিকাশ করে।গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার।এই সময় যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন গ্রহণ করা না যায় তাহলে এনেমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে৷ তাই রক্ত স্বল্পতা প্রতিরোধ করার জন্য মাকে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে৷ গরু কিংবা খাসির কলিজা, বাচ্চা মুরগি, ডিম, মাছ, কলা, কচুশাক, পালং শাক এ সবের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে।

★★ভিটামিন-এ

হাড় ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহের গঠনের জন্য ভিটামিন এ প্রয়োজন৷ গর্ভস্থ শিশুর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বেড়ে ওঠা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকর থাকা, দৃষ্টিশক্তি সঠিকভাবে কাজ করা এবং সার্বিকভাবে বেড়ে ওঠায় ‘ভিটামিন এ’ প্রয়োজন। গর্ভে থাকা শিশু যেহেতু সব পুষ্টি মায়ের মাধ্যমেই পায়, তাই গর্ভবতী মায়ের শরীরে ভিটামিন এ-এর এই চাহিদা পূরণ হওয়া দরকার। একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ৮০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে খাবারের তালিকায় থাকা চাই মুরগির কলিজা, ডিম, গাজর, আম, গাঢ় কমলা ও হলুদ রঙের ফল এবং গাঢ় সবুজ রঙের শাক-সবজি।

★★ভিটামিন বি-১, বি-২ ও নায়াসিন:

ভিটামিন-বি পরিবারভুক্ত ৬টি ভিটামিনের মধ্যে গর্ভাবস্থায় চাহিদা বেড়ে যায় ভিটামিন বি-১ বা থায়ামিন, বি-২ বা রিবোফ্লাবিন ও বি-৩ বা নায়াসিনের। বি-ভিটামিন ডায়জেস্টিভ সিস্টেমকে চালু রাখে। ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি চামড়ার শুষ্কভাব কমিয়ে সতেজ রাখে।গর্ভাবস্থায় যেহেতু হরমোনের পরিবর্তনের কারণে পেট, কোমর, গলা-এসব জায়গার চামড়ার রং পরিবর্তন হয়, পেটের চামড়া স্ফিত হওয়ায় টান লাগে, তাই বি-ভিটামিন এই সময় চামড়ার দেখভালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ‘রেড মিট’, কলিজা, ডিম, কলা, কিডনি, বিনস, পালংশাক, কাঠবাদাম ও দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি পাওয়া যায়।

★★ভিটামিন-সি

ভিটামিন সি এর সাহায্যে শরীর সহজেই শাকসবজি থেকে আয়রন শোষণ করে নিতে পারে, রক্তশূন্যতার সম্ভাবনা কমায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।এ জন্য ডাক্তার বা পুষ্টিবিদেরা আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরপরই লেবু, কমলা, বাতাবিলেবু বা আমলকী খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ভ্রূণের মানসিক বৃদ্ধিতে ভিটামিন-সি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন-সি ফলিক অ্যাসিডকে কার্যকর করে তোলার চালিকাশক্তি।গর্ভের শিশুর মাংসপেশি ও হাড় গঠনের কোলাজেন প্রোটিনের প্রয়োজন। ভিটামিন-সি কোলাজেন তৈরিতেও সাহায্য করে।একজন গর্ভবতী মায়ের দিনে ৮৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন – আমলকী, পেয়ারা, কমলা লেবু, বাতাবি লেবু, সবুজ শাক-সবজি, টমেটো এবং আলু খেতে হবে৷ মনে রাখবেন বেশিক্ষণ রান্না করলে ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়৷

★★ভিটামিন-ই

ভিটামিন ই রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে৷ আপেল, বাদাম, গাজর, বাঁধাকপি, ডিম, অলিভ তেল ও সূর্যমুখি বীজে ভিটামিন ই পাওয়া যায়৷

★★জিংক

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস জিংক এবং ফলিক এ্যাসিডের ভূমিকা অপরিসীম। জিংক গর্ভপাত প্রতিরোধ করে এবং শিশুর ওজন বাড়ায়৷ জিংক শরীরের প্রত্যেকটি অংশের বিভিন্ন ধরনের কার্যক্ষমতা সক্রিয় রাখে এবং টিস্যু ও কোষ গঠনে ভূমিকা রাখে। এমনকি গর্ভে থাকা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বেড়ে ওঠায় জিংক গুরুত্বপূর্ণ। WHO এর মতে, গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস ১১ মিলিগ্রাম, দ্বিতীয় ৩ মাস ১৪ মিলিগ্রাম ও শেষের ৩ মাস ২০ মিলিগ্রাম করে জিংক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। এই জিংক পাওয়া যাবে প্রানিজ প্রোটিনে৷ তাছাড়াও চিনে বাদাম, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, গম এসবে প্রচুর পরিমাণ জিন্ক থাকে যা আপনার গর্ভাবস্থায় চাহিদা পূরণে সক্ষম৷

★★আয়োডিন

গর্ভাবস্থায় আয়োডিনের অভাব হলে গর্ভে থাকা সময় থেকে শুরু করে জন্মের ৩ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর বুদ্ধির বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এছাড়াও আয়োডিনের অভাবে গর্ভে থাকা শিশুর মৃত্যুর সম্ভাবনাও থাকে। এটি থাইরয়েডকেও সুস্থ রাখে। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম আয়োডিনযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে WHO। আয়োডিন যুক্ত খাবারের মাঝে আছে আয়োডিনযুক্ত লবণ, সামুদ্রিক মাছ, পনির, টক দই, গরুর দুধ ইত্যাদি।

★★ভিটামিন ট্যাবলেট

গর্ভাবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিনের প্রয়োজন হয়৷ এই অতিরিক্ত ভিটামিনের চাহিদা খাবারের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব না হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ করতে হবে৷

★★দুগ্ধজাত খাবার

দুধ, পনির, দই ইত্যাদি খাবারগুলো ক্যালসিয়ামের চমৎকার উৎস। এগুলোর চিনি ও ফ্যাটের পরিমাণ যেন কম থাকে সেটি খেয়াল করতে হবে। ফ্যাট জাতীয় খাবার শিশুর মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে। অনেক মানুষের শরীরেই আয়োডিনের ঘাটতি থাকে। আয়োডিন এমন একটি খনিজ উপাদান যা শিশুর মস্তিষ্কের গঠনের জন্য অপরিহার্য। দুগ্ধজাত খাবার ও সামুদ্রিক খাবার আয়োডিনের চমৎকার উৎস।

★★ফল ও শাকসবজি

দিনে ৫ বার ফল ও সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। ফলের চেয়ে শাকসবজি বেশি খান। জুস ও স্মুদি ও পান করতে পারেন। তবে এগুলোর সুগার ব্লাড সুগার লেভেল বৃদ্ধি করতে পারে এবং দাঁতেরও ক্ষতি করতে পারে। তাই এগুলো সীমিত পরিমাণে পান করাই ভালো। তাজা ফল ও সবজি খাওয়াই বেশি স্বাস্থ্যকর।গর্ভাবস্থায় যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়, তা হলে খুব মুশকিল! কারণ, তাতে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। কাজেই এসময়ে ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়াটাও জরুরি। ফল ও শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তা ছাড়া ভিটামিন ও নানা প্রাকৃতিক খনিজও রয়েছে ফল এবং সবজিতে।

★★ডাল (Daal)

ডালে রয়েছে হাই প্রোটিন। কাজেই নানা ধরনের ডাল, ঘুগনি, কাঁচা বা সেদ্ধ করা ছোলা, এগুলো খেতেই হবে। সারাদিনে মোটামুটি 2 বাটি মতো ডাল আপনি খেতে পারেন।

★★স্টার্চ জাতীয় খাবার

আলু, লাল চালের ভাত, রুটি, পাস্তা ইত্যাদি স্টার্চ জাতীয় খাবার আপনার প্রাত্যহিক খাদ্যতালিকায় রাখুন। শর্করা জাতীয় খাবার শরীরে এনার্জি প্রদানে সাহায্য করে।

প্রেগন্যান্ট অবস্থায় যে খাবারগুলো মায়েদের খাওয়া উচিৎ না :

★★অপাস্তুরিত দুধ

অপাস্তুরিত দুধ বা কাঁচা দুধে লিস্টেরিয়া নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাই ভালো করে না ফুটিয়ে দুধ পান করা যাবেনা। অপাস্তুরিত দুধ দিয়ে তৈরি খাবার যেমন- নরম পনির খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

★★কাঁচা ডিম

ডিম পুষ্টিকর একটি খাবার। অনেকেরই কাঁচা ডিম খাওয়ার অভ্যাস থাকে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কাঁচা ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ কাঁচা ডিমে সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাই ডিম ভালোভাবে সিদ্ধ না করে খাওয়া যাবেনা।

★★ক্যাফেইন

কফি ক্লান্তি দূর করার জন্য কার্যকর হলেও গর্ভাবস্থায় এর পরিমাণ কম করতে হবে। চা, কফি ইত্যাদিতে ক্যাফেইন থাকে। দৈনিক ২০০ গ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করা ঠিক নয়। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে কম ওজনের শিশু জন্ম গ্রহণ করে। মিসক্যারেজের মত ঘটনাও ঘটতে পারে।

★★সামুদ্রিক মাছ

সামুদ্রিক মাছ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু অধিক পরিমাণে খেলে গর্ভের শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। কারণ সামুদ্রিক মাছে পারদ জাতীয় পদার্থ থাকে।
কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে :
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে খাওয়া বিপদজনক। এতে গর্ভপাতের মত ঘটনা ঘটতে পারে।
★★★শারীরিক অবস্থা, ওজন ইত্যাদি বিবেচনা করে ভাল ডায়েট সাজেশন অবশ্যই ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নেবেন।
★ভোরবেলা কী খাবেনঃ

ঘুম থেকে উঠেই সবচেয়ে আগে এক গ্লাস pani খান। তারপর একমুঠো ড্রাই ফ্রুট খেতে পারেন। তবে একমুঠো মানে কিন্তু একমুঠোই, তার বেশি নয়। যদি চিবিয়ে কিছু খেতে ইচ্ছে না করে তা হলে এক গ্লাস প্লেন গরুর দুধ (চিনি ছাড়া) বা আমন্ড মিল্ক বা আপেলের রস খেতে পারেন। এই খাবারটি চেষ্টা করুন সকাল সাতটার মধ্যে খেয়ে নিতে।

★★সকালে –

সকালে অনেক গর্ভবতী নারীরই বমি বমি ভাব হয় এবং খেতে ইচ্ছে করেনা। সেক্ষেত্রে ভারী খাবার না খেয়ে হালকা চা (গ্রিনটি)ও বিস্কিট খেয়ে নিতে পারেন। এর বেশ খানিকটা পরেই ২ টি রুটি ও সবজি খেতে পারেন। সাথে একটি ডিম সিদ্ধ করে খাওয়া ভালো।এক বাটি ফলের সঙ্গে এক বাটি চিঁড়ের পোলাও বা নোনতা সুজি খেতে পারেন, তবে এক্ষেত্রে বাদাম না দিয়ে খেলে ভাল। প্রতিদিন এক খাবার খেতে তো ভাল লাগে না, কাজেই চিঁড়ে বা সুজির বদলে কোনদিন পরোটা খেতে পারেন, কোনদিন স্যান্ডউইচ বা ওটস-ও খেতে পারেন। তবে যা-ই খান, খেয়াল রাখবেন একগাদা তেল যেন না থাকে। সকাল ন’টার মধ্যে।

★★মাঝ সকালে কী খাবেনঃ

বেলা ১১টা নাগাদ আপনার পছন্দমতো এক বাটি সুপ খেতে পারেন। প্যাকেটের সুপ না খেয়ে বরং চেষ্টা করুন বাড়িতে সুপ তৈরি করতে। পছন্দমতো সবজি, যেমন পালং শাক, বিট, গাজর, টোম্যাটো ইত্যাদি একসঙ্গে সেদ্ধ করে গোলমরিচের সঙ্গে সামান্য মাখন দিয়ে গরম-গরম সুপ খেতে পারেন। চাইলে কখনও চিকেনও দিয়ে দিতে পারেন।

★★দুপুরে

দুপুরে ১ বাটি ভাতের সাথে মাছ বা মাংস, সবজির তরকারী, শাক, ডাল এবং তাজা ফল ও সবজির সালাড। খাওয়ার শেষে খেতে পারেন দই।আপনি যদি ভাত খেতে পছন্দ করেন, তা হলে দুপুরে ভাতই খান। তবে সঙ্গে রাখুন মাছ, প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি এবং টক দই। এই সময়ে ওজন বাড়ার দিকে চিন্তা না করে বরং হেলদি খাবারের দিকে মন দিন। অনেকেই প্রেগন্যান্সিতে মাছ খেতে পারেন না, তাঁরা চাইলে ডিম বা চিকেন খেতে পারেন দুপুরে। যদি আপনার ভাত খেতে ভাল না লাগে সেক্ষেত্রে রুটি খেতে পারেন। যদি একটু অন্যরকম খাবার খেতে ইচ্ছে করে, তা হলে গ্রিলড চিকেন ও স্যালাডও খেতে পারেন। এই সময়ে ডাল খাবেন বেশি করে। লাঞ্চটা বেলা একটা থেকে দুটোর মধ্যে।

★★বিকালে

ভাজা-পোড়া খাবার না খেয়ে ঘরে তৈরি কোন স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স বা কেক বা বাদাম বা মটরশুঁটি সিদ্ধ খেতে পারেন।সন্ধের দিকে ফল না খাওয়াই ভাল। এক মুঠো ড্রাই ফ্রুট ও সঙ্গে গ্রিন টি বা যে-কোনও হেলথ ড্রিঙ্ক খেতে পারেন। পাঁচটা থেকে সন্ধে ছ’টার মধ্যে খাবেন।

★★রাতে

রাতের খাবার দুপুরের মতোই হবে। তবে শাক রাতে না খাওয়াই ভালো। বেশি করে সবজির তরকারী খেতে পারেন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১ গ্লাস ননী মুক্ত দুধ পান করতে ভুলবেন না।মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করলে খিচুড়িও খেতে পারেন। তবে দুপুরে যদি ভারী খাবার খেয়ে থাকেন, রাতে একটু হালকা খাওয়ার চেষ্টা করুন আর সম্ভব হলে রাত ন’টা থেকে দশটার মধ্যে ডিনার সারুন, এতে হজমে সুবিধে হবে।

★★★কিছু জরুরি টিপস:

গর্ভাবস্থায় খিদে বেশি পায় কারণ এই সময়ে একজনের না, দু’জনের জন্য আহার করা হয়। মা কী খাচ্ছেন, তার উপর শিশুর স্বাস্থ্য নির্ভর করে। কাজেই এই সময়ে আরও বেশ কিছু দরকারি টিপস মেনে চলা জরুরি...

১। আপনি যা ইচ্ছে, তাই খেতে পারেন ঠিকই, তবে এক একটি প্রেগন্যান্সি এক-একরকমের হয়, একথা মনে রাখবেন। কোনও একটি নির্দিষ্ট খাবার একজনের সুট করছে মানে এই নয় যে, তা আপনার শরীরের জন্যও স্বাস্থ্যকর। যাই খান, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাবেন।

২। কোনও নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার পর যদি অস্বস্তি হয়, যদি দেখেন শরীরের কোথাও র্যাশ বেরিয়েছে বা ব্যথা হচ্ছে, তা হলে দয়া করে সেই খাবারটি আর খাবেন না। হতে পারে হয়তো খাবারটি এর আগেও আপনি খেয়েছেন কিন্তু তখন কোনও সমস্যা হয়নি, তবে গর্ভাবস্থায় শরীরে নানা হরমোনের তারতম্য হয় ফলে অনেক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।

৩। প্রতিদিন সামান্য হলেও কিন্তু ড্রাই ফ্রুট খাবেন সারা দিনে।

৪। খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাবেন না, এই সময়ে শরীরে জলীয়ভাব বেড়ে যেতে পারে এবং লবণ থেকে তার মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, ফলে পা ফুলে যাওয়ার সমস্যা দেখে দিতে পারে। কাঁচা লবণ তো খাবেনই না। চিনি খাওয়াও যতটা সম্ভব কমিয়ে দিলে ভাল। অনেক গর্ভবতী মহিলার শরীরে এই সময়ে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং অতিরিক্ত চিনি থেকে পরবর্তীকালে মধুমেহ বা ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

৫। গর্ভাবস্থায় ঘি এবং মাখন খান। যদি একটু ওজন বাড়ে, তাতে ক্ষতি নেই। ডেলিভারির পর অনায়াসে ওজন কমাতে পারবেন, কিন্তু গর্ভে থাকা শিশু যদি পুষ্টি না পায় তা হলে মুশকিল। যদি স্বাভাবিকের তুলনায় আপনার ওজন বেশির দিকে হয় সেক্ষেত্রে অবশ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ঘি বা মাখন খাওয়া উচিত।

৬। বাইরের খাবার যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন, বাইরে কোথায় কীভাবে রান্না হচ্ছে, কেমন তেল বা মশলা ব্যবহার করা হচ্ছে কিছুই আপনি জানেন না। ইচ্ছে হতে পারে বাইরের চটপটি খাবার খাওয়ার, কিন্তু মাঝে-মাঝে ইচ্ছে দমন করা প্রয়োজন। বাড়ির রান্না খান। যদি আপনাকে বাইরে যেতে হয়, তা হলে বাড়ি থেকেই খাবার নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। ‘রেডি টু ইট’ বা ‘প্রসেসড’ খাবার ভুলেও কিন্তু এই সময়ে খাবেন না।

৭। রান্না করার আগে এবং খাবার খাওয়ার আগে খুব ভাল করে বাসন ও হাত দুটোই ধুয়ে নিন। সাধারণত প্রেগন্যান্সিতে মাঝে-মাঝেই খিদে পায়, তবে সকলের ক্ষেত্রে একরকম নাও হতে পারে। যদি খিদে নাও পায় তাও অন্তত দু’ঘণ্টা অন্তর-অন্তর কিছু না কিছু হেলদি খাবার খেতে থাকুন। অনেকেরই গর্ভাবস্থায় বমি করার প্রবণতা থাকে, তাঁদের কিন্তু একদমই পেট খালি রাখা উচিত নয়।

৮। সারাদিনে অল্প-অল্প করে ছয় থেকে সাত বার খান। এতে পেট ফাঁপা বা ব্লোটিংয়ের সমস্যা হবে না।

৯। মাঝে-মধ্যে বাইরে খেতে যেতেই পারেন, তবে রাস্তার খাবার না খেয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় খাওয়া-দাওয়া করুন।

১০। আপনি যদি কোনও সাপ্লিমেন্ট খেতে চান, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই খান। বাজারে অনেক সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায় যা প্রেগন্যান্সিতে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে বলে দাবি জানায়, তবে সব যে সকলের জন্য ভাল তা তো নয়, কাজেই চিকিৎসকের সঙ্গে একবার কথা বলে নেওয়াটা ভাল।

১১।প্রেগন্যান্সিতে আঙুরটা এড়িয়ে চলুন। সে সবুজ আঙুর হোক বা কালো। মোট কথা, ওয়াইন প্রেগন্যান্সিতে খুবই ক্ষতিকর, কারণ এর মধ্যে রয়েছে রেসভিরাট্রল, এটা হবু মা-দের জন্য হানিকরক। তা ছাড়াও গর্ভাবস্থায় কালো আঙুরের খোসা বা উপরের অংশটা হজম করতে সমস্যা হবে।

১২। গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়া অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর, তবে সব ফল কিন্তু খাওয়া চলবে না। আনারস, পেঁপে, আপেল, তেঁতুল, আঙুর ইত্যাদি না খাওয়াই ভাল, কারণ এতে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই ফলগুলো বাদেও আরও কিছু খাবার রয়েছে যা প্রেগন্যান্ট থাকাকালীন এড়িয়ে যাওয়া উচিত যেমন: কফি, ওয়াইন, কাঁচা ডিম, প্রসেস করা খাবার যেমন :সসেজ, সালামি ইত্যাদি।

১৩/শরীরে যেন পানি ঘাটতি না হয়, সেই বিষয়েও নজর দেওয়া দরকার। সারাদিনে যতটা বেশি সম্ভব পানি পান করুন।

১৪। প্রেগন্যান্ট থাকাকালীন খিদে পাওয়াটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এই নিয়ে চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। তবে খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই যদি আবার খিদে পায়, তা হলে সে সময়ে অন্য কোনও সলিড ফুড না খেয়ে পানি খান। গর্ভাবস্থায় যদি আপনাকে বাইরে বেরতে হয়, তা হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার সঙ্গে রাখুন। খিদে পেলে তা চেপে না রেখে খেয়ে নিন

Compilation and Refinement
Kazi Jannatul Mardia
B.sc in Nutrition and food Engineering (DIU)
Student from
Sakariya University(TÖMER)Turkey.

1 টি মন্তব্য: