নতুন বছর শুরু হোক নতুন কিছু দিয়ে
নতুন বছর শুরু হোক নতুন কিছু দিয়েঃ
আমার বয়স আল্লাহ্র রহমতে ৪০ চলছে। ২০০৩ সাল থেকে কম্পিউটারের টেবিল-চেয়ারের সাথে সম্পর্ক। নিয়মিত প্রায় ১৭বছর।
আপনাদের সবারই ধারণা আছে যে, যারা অফিসে বসে কাজ করেন কিংবা কম্পিউটার রিলেটেড কাজ করেন তাদের টেবিল-চেয়ারের সাথেই সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি। সেক্ষেত্রে আমারও কম্পিউটার আর চেয়ারের সাথে সম্পর্ক অনেক দীর্ঘ।
গত মার্চে বাসায় রিপেয়ার কাজ করানোর সময় নিজেই কিছু টাইলসের প্যাকেট এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরাচ্ছিলাম। সারারাত না ঘুমিয়ে সকালে কাজটি করছিলাম। পিঠে হাল্কা ব্যাথা ছিল কিন্তু পাত্তা দেইনি। শেষ প্যাকেটটি সরানোর আগে শরীর ও মন কোনটাই সায় দিচ্ছিল না। তবুও যেহেতু সর্বশেষ প্যাকেট ছিল তাই সেটি না সরালে কাজ অসমাপ্ত থেকে যাবে ভেবে প্যাকেটটি উঠাতে গেলেই; কোমড়ে কিছু একটা ঘটলো বলে আন্দাজ পেলাম।
আর নড়তে পারলাম না। সেখানেই শুয়ে পরলাম। তারপর ব্যাথা কাকে বলে তা জীবনে প্রথম বারের মত বুঝতে শিখলাম। আর কিছুক্ষণ পর পর পিঠের পেশীগুলো টান দিয়ে দিয়ে দম বন্ধ করে ফেলার অবস্থা করলো। তৃষ্ণা কি জিনিস সেটাও সেদিন বুঝলাম। কিছুক্ষণ পর পর কোকের বোতলের ছিপি দিয়ে একটু একটু পানি খেয়ে গলা ভিজাচ্ছিলাম। পানির মর্মও বুজলাম। ভাবলাম, এই এক ছিপি পানি না পেলে আমার কি হত! (তারপর থেকে আমি পানির অপচয় না করার চেষ্টা করি)
এরপর সামান্য না নড়িয়ে ৫/৬ জনে ধরে স্ট্রেচারে উঠিয়ে এ্যাম্বুলেন্সে করে আমাকে নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালে। এরপর এক্সরে রিপোর্ট আর ডাক্তারের বক্তব্যে উঠে আসলো চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ডাক্তার জানালেন আমার এই সমস্যা অনেকদিন ধরেই।
ডাক্তারের বক্তব্য ঠিক ছিল কিন্তু আমার কাছে বিষয়টি ছিল পাত্তাহীন। এইসব সামান্য টুকটাক ব্যাথার কোন পাত্তা আছে নাকি আমাদের কাছে?
যাইহোক, তারপর টানা তিনদিন এক ইঞ্চি শরীর সরানোর মত সামর্থ্য আমার ছিল না। এপাশ-অপাশ করতেও অন্যের সহযোগীতা লাগতো। তিন সপ্তাহ লেগেছিল মোটামুটি ঠিক হতে। এই তিন সপ্তাহে আমার যা শিক্ষা হয়েছিল সেটা হচ্ছে, মানুষের হাত ভাঙলে গলায় ঝুলিয়ে রেখেও চলাফেরা করা যায়। পা ভাঙলেও ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলা যায়, কিন্তু কোমর ভাঙলে শুয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। আর এরচেয়ে অসহায়ত্ব মানুষের কাছে আর অন্য কিছু নেই।
যাইহোক, গত ৯মাস ২৪ঘন্টাই আমার পিঠে চিনচিনে ব্যাথা করতো করতো। কোমর এদিক সেদিক নাড়ালে একটু আরাম লাগতো। আমি এই ব্যাথার নাম দিয়েছিলাম মিষ্টি মিষ্টি ব্যাথা। তবে মনের ভিতর একটা ভয় সবসময় কাজ করতো যে, যদি বেঁচে থাকি তাহলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ব্যাথা আমাকে কোথায় নিয়ে যায় তা আল্লাহ্ই ভাল জানেন!
যাইহোক, যেহেতু আমি সবকিছু প্ল্যান মোতাবেক করি সেহেতু এবারের প্ল্যান ছিল নতুন বছরের প্রথমদিন থেকে আমি নিয়মিত সকালে দৌড়াবো। এমনিতেই আমি প্রতিদিন প্রচুর হাঁটাহাঁটি করি। কিন্তু কখনো দৌড়ানো হয়নি।
২৬ডিসেম্বর থেকে আমি দৌড়ের ট্রায়াল দেওয়া শুরু করি। সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কোমরের ব্যাথাটার কারণে দৌড়াদৌড়ি করা সম্ভব হবে কিনা সেটা দেখা। কিন্তু আমি আশ্চার্য হই যখন দেখি প্রায় ১কিলোমিটারেরও কম দৌড়ের পরই কোমরের চিনচিনে ব্যাথাটা অনেকটা হাল্কা হয়ে গেছে।
প্রথমদিন এরচেয়ে বেশী রিস্ক আমি নিতে চাইনি। তারপর আর কিছু পথ দৌড়াদৌড়ি করে বাসায় ফিরে আসি। বাসায় এসেও নিজেকে অনেকটা হালকা অনুভব করি।
পরদিন দৌড়ের পথ আরেকটু বাড়াই। যেমন, প্রথমদিন আমি আসাদগেট থেকে দৌড়ে সংসদ ভবনের সামনে পর্যন্ত যেতে পেরেছিলাম। এতেই আমার জিব্বা বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা। তারপরের দিন আমি পুরো সংসদ ভবন অর্ধেক হেঁটে এবং অর্ধেক দৌড়ে পারি দেই। এরপরের দিনও একই দূরত্ব পারি দেই।
এরপরের দিন মানে গতকাল শারীরিক ও মানুষিক শক্তির কারণে আমি এক দৌড়েই সংসদ ভবনের পুরো এলাকা পারি দেওয়ার চেষ্টা করি। ৮০% ভাগ দৌড়েই পারি দেই, বাকীটা হেঁটে। ২০ ভাগও পারতাম কিন্তু গত চারদিনের দৌড়ের পর পায়ে যেখানে যেখানে ব্যাথা করতো সেটার বাহিরে নতুন এক জায়গায় ব্যাথা অনুভব করি। সেটার কারণে সম্ভব হয়নি। পুরো এলাকা পারি দিয়ে আরও কিছু এক্সারসাইজ করে বাসায় ফিরি।
মাত্র ৫দিনের দৌড়াদৌড়ির কারণে আমার কোমরের ব্যাথা এখন সাইকোলজিক্যাললি কিছুটা থাকলেও ফিজিক্যালি নাই বললেই চলে।
ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বেড়ে গেছে তাই সামান্য কাজ করে হাপিয়ে যাওয়ার সমস্যাটাও নাই। প্রথমদিন ১কিমি দৌড়াতেই যেই কষ্ট হয়েছে পাঁচদিনের মাথায় ৪কিমি দৌড়েও সেই কষ্ট হয়নি।
১৭/১৮ বছরের সিগারেটের বদভ্যাস তিনবছর আগে ছেড়ে দিয়েছি তাই একসময় শ্বাসকষ্টের যেই সমস্যা ছিল সেটাও নাই। এখন যেন বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছি।
নতুন বছরের প্রথমদিনকে মাথায় রেখে নতুন কিছু করতে পারেন।
# যারা নামাজ পড়েন না তারা প্রথমদিন থেকে নিয়মিত নামায আদায় করার চেষ্টা করতে পারেন।
# যারা সিগারেট পান করেন তারা সিগারেট ছেড়ে দিতে পারেন।
# ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
যা বুঝলাম হাঁটাহাঁটি থেকেও দৌড় বেশি উপকারী। যারা দীর্ঘ সময় চেয়ারে বসে থাকেন আর পিঠে কোন ব্যাথা আছে তাঁরা দৌড়াদৌড়ির অভ্যাস করতে পারেন। কিংবা আগে থাকতেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে মনে সুখ আসে না, কাজে মন বসে না। কোন কিছুতে উৎসাহ পাওয়া যায় না। নতুন বছর শুরু হোক একটি ভাল অভ্যাস দিয়ে।
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Onk valo lekhcen vi
উত্তরমুছুনBha vlo to
উত্তরমুছুন