বাচ্চা দের ছোটকাল থেকে ইসলামের শিক্ষা দিন

- আম্মু! আজ জান্নাতে ঘর বানাবেন না? কথাটা কানে আসতেই রুমের ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে চোখ জুড়িয়ে গেল। মাশাআল্লাহ! চারটা ফুটফুটে বাচ্চা। তিনটা ঘর জুড়ে হুটোপুটি করছে। তিন নাম্বার বাচ্চার বয়স তিন কি চার হবে। এই বাচ্চাটিই জড়ানো আদুরে কন্ঠে বলেছিল— আম্মু! আজ জান্নাতে ঘর বানাবে না? তার দেখাদেখি বাকি দুইজনও বলতে শুরু করল— আম্মু! আজ জান্নাতে ঘর বানাবে না? (এই পরিবার নতুন ভাড়াটিয়া। আমাদের পাশের ফ্লাটেই থাকেন।) আমি আর আমার আপু তো দারুণ অবাক! এতটুকু ছোট বাচ্চা এটা কি বলছে? জান্নাতে ঘর কিভাবে বানাবে? আমরা কৌতুহলী হয়ে বাচ্চাদের মায়ের কাছে প্রশ্ন করে বসলাম। প্রশ্ন শুনে অপরিচিত ভাবীর মুখে স্মিত হাসি ফুটে উঠে। শরবতের গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বললেন, -একটু অপেক্ষা করুন। নিজের চোখেই দেখে যাবেন জান্নাত বানানোর পদ্ধতিটা। বাচ্চাদের মা হাতের কাজ গুছিয়ে এলেন। আমাদেরকে হালকা নাস্তা দিলেন। তারপর কোলেরটাকে নিয়ে মেঝেতে বসে গেলেন। সবার চোখেমুখে থেকে উৎসাহ উদ্দীপনা যেন ঠিকরে বের হচ্ছে। এক.... দুই.... তিন......!! শুরু জান্নাতমহল নির্মাআআআআণ!!!!! মায়ের ঘোষণা শেষ হতেই তিন কচিকাঁচা একসাথে সূরা ইখলাস পড়তে লাগল। একে একে দশবার পড়া হল। পড়া শেষ করেই সবাই সমস্বরে হৈচৈ করে উঠল— –আলহামদুলিল্লাহ! আমরা জান্নাতে একটা ঘর বানিয়েছি। – খুব ভাল করেছ! এবার বলতো সোনামণিরা, তোমরা এই ঘরে কী রাখতে চাও? – ধনভাণ্ডার রাখতে চাই আম্মু! –ঠিক আছে রাখো! লা হাওলা ওয়া লা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহ! লা হাওলা....... বাচ্চারা সমস্বরে ইস্তেগফার পড়া শেষ করল। মায়ের মুখে ফুটে উঠলো তৃপ্তির হাসি! আশ্চর্য কন্ঠে তিনি বলতে লাগলেন — – ওমা! তোমরা অনেক ধনভাণ্ডার জমিয়েছো। আচ্ছা, এবার বল তো তোমরা কাকে বেশি ভালবাসো? _ আল্লাহকে! – তারপর? – নবীজী (সা) কে। – কেয়ামতের দিন সবার কেমন লাগবে? – ভীষণ পিপাসা লাগবে আম্মু! – তখন কোনটা বেশি প্রয়োজন হবে? – নবীজীর (সা) সুপারিশ! –তোমরা সুপারিশ পেতে চাও? – জ্বি আম্মু! – তাহলে এখন কি করতে হবে? আল্লাহুমা সাল্লি আলা মুহাম্মদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মদ............ ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। বাচ্চাগুলো সুর করে দুরুদ শরীফ পড়া শেষ করলো। হাসিমুখে মা এবার নতুন প্রশ্ন করেন— – আচ্ছা, জান্নাতে বাগান করার শখ কার কার? – আমাল! আমার!! আমার!!! সবাইকে সামলে নিয়ে বললেন— – ঠিক আছে। সবাই বাগান করবে। তোমাদের এখন কি করতে হবে? সুবহানাল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহু আকবার! অনেকক্ষণ যাবৎ বাচ্চারা একে একে যিকির করে যায়। এক সময় যিকির যিকির খেলা শেষ হলো। সবাই খুশিমনে আগের হুটোপুটিতে ফিরে গেল। মহিলাও খুশিমাখা চেহারায় ঘরের মেঝে থেকে উঠে এসে আমাদের সামনে বসলেন। – আসলে এটা আমার বাচ্চাদের ঘরোয়া খেলা! তখন আমাদের চোখেমুখে রাজ্যের বিস্ময়! হায় আল্লাহ! এত সুন্দর খেলা দেখা দূরে থাক, এমন পবিত্র ও শিক্ষণীয় খেলার কথা তো আমার কল্পনাতেও আসেনি কখনো। আমি লম্বা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চরম আশ্চর্যে ভাবীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম– – ভাবী কিভাবে তাদেরকে এরকম করে গড়ে তুললেন? – আসলে বোন, সবই সু অভ্যাসের ফল। ছোটরা গল্প শুনতে ভালবাসে, খেলাধুলা করতে পছন্দ করে। ছোটবেলা থেকেই ওদেরকে খেলাচ্ছলে, গল্পচ্ছলে এসব শিক্ষা দিয়েছি। সহজ হাদীস শুনিয়েছি। যিকির শিখিয়েছি। মাসনুন দোয়া শিখিয়েছি। সাথে সাথে কোন আমলের কী লাভ, সেটাও জানিয়েছি। এভাবেই শুনতে শুনতে, খেলতে খেলতে একসময় ওরা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের সাথেই মিলিয়ে ফেলেছে ব্যাপারগুলো। আমার চোখদিয়ে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল......... - আমিও শুনতে পাই.......আমার বাচ্চারা জান্নাতমহল বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

1 টি মন্তব্য: