স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশা, দায় কার ?

স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশা, দায় কার? : . এখন কেন মাতম করছেন আজকে চিকিৎসা পাচ্ছেন না। অক্সিজেন পাচ্ছেন না। আইসিইউ বেড পাচ্ছেন না। টেস্ট করাতে পারছেন না সিরিয়াল পাচ্ছেন না। রিপোর্ট ঠিক মত পাচ্ছেন না। হাসপাতালে এডমিট হতে পারছেন না। যেখানে যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য, সেখান থেকেই ফিরিয়ে দিচ্ছে। এম্বুলেন্স, গাড়িতে, হুইলচেয়ারে মারা যাচ্ছে আপনাদের স্বজন।। বিনা চিকিৎসায় ১০ মাসের গর্ভের সন্তান সহ মারা যায় মা।। হাতির গর্ভস্থ সন্তান মারা গেলে মাতম তুলেছেন মানবিক হৃদয়ের জন্য, আজ যখন বিনা চিকিৎসায় একজন মা তার অনাগত সন্তান সহ মারা গেলেন, তখন মাতম তুলেছেন তো।? কাকে আজ দায় দিবেন? দোষারোপ করবেন কাকে? কোভিড ১৯ এর শুরুতে যখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন রুখতে চিকিৎসকরা চেম্বার বন্ধ করলো,তখন গালিগালাজ করে ফেনা তুলে ফেলেছিলেন? ডাক্তাররা কসাই। সেল্ফিস। ভীতু ও কাপুরষ। পালিয়ে গেছে ডাক্তাররা। কই এখন তো ডাক্তাররা সবাই নিজ দায়িত্ব পালনে কর্মস্থলে আছেন। কোয়ারেন্টাইনে বা আইসোলেশানে আছেন। কতজন চিকিৎসক আক্রান্ত, কতজন মারা গেছেন সে হিসেব রেখেছেন?? আপনাদের কাছে এই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার মূল সমস্যা ছিলোঃ ডাক্তাররা গ্রামে যায়না। ডাক্তাররা ডিউটি ফাঁকি দেয়। ডাক্তাররা চেম্বারে ভিজিট নেয়। ডাক্তাররা টেস্ট দেয়,কমিশন খায়। মেডিসিন কোম্পানি থেকে কমিশন খায়।
ডাক্তাররা কথা না শুনেই প্রেসক্রিপশন লিখে ফেলে।
এই ডাক্তারদের দোষ দেখা ছাড়া এই দেশের হেলথ সিস্টেম নিয়ে আপনাদের আর কোন অভিযোগ ছিলো না। আর জাতির বিবেকের ঠিকাদার সাংবাদিকগন আপনাদের দেখিয়েছে, কিভাবে ডাক্তাররা ভুল চিকিৎসা দিয়ে আপনাদের মেরে ফেলে। মফস্বলের মেট্রিক ফেইল বা আরো শিক্ষিত সাংবাদিক ভুল ধরে গেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর চিকিৎসায়। কোনদিন জানতে চেয়েছেন হে সাংবাদিক সাহেব একজন বিশেষজ্ঞ যখন ভুল চিকিৎসা দিলো,আপনি যখন ভুল ধরলেন, অভিযোগ প্রচার করলেন,তবে সঠিক চিকিৎসা কি নিশ্চয়ই আপনি জানেন? হে সাংবাদিক সাহেব, আপনি কেন আমাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিচ্ছেন না?? ডাক্তারদেরকে বছরের পর বছর জন্ডিস সাংবাদিকতার শিকার হতে দেখেও মজা লুটেছেন।
গালির পর গালি দিয়েছেন। আজ সাংবাদিকদের বলুন, চিকিৎসা দিতে?? চিকিৎসা ব্যবস্থা মানে একজন ডাক্তারই সব নয়। ঢাল তলোয়ার বিহীন নিধিরাম সর্দাররা আপনাকে মাউন্ট এলজাবেথ এর চিকিৎসা দিতে পারেননা। কোনদিন বুঝতে চাননি, চিকিৎসা একটা টীম ওয়ার্ক। এখানে যেমন ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া,ক্লিনার, বিভিন্ন জনবল লাগে,তেমনি ইনভেস্টিগেশন এর জন্য প্যাথলজি ল্যাব লাগে, মেডিসিন লাগে, যন্ত্রপাতি লাগে, ওটি লাগে, আইসিইউ, এইচডিইউ, সিসিইউ লাগে।। যেটা লাগেনা সেটা হলো রাজনীতি। গ্রুপিং।সিন্ডিকেট।।দালালী। কিন্ত সেটাই বেশি চলে তাই অনেক যোগ্য লোকেরা এই সিস্টেমের তলে পড়ে কোণঠাসা হয়ে থাকেন। সাংবাদিকরা যদি চিকিৎসা ব্যবস্থার মূল সমস্যা গুলো নিরন্তর তুলে আনতেন খবরে, চোর বাটপার, কমিশন খোরসিন্ডিকেট এর বিরুদ্ধে লেগে থাকতেন, তবে তারা এত নীরবে লুটপাট করে সব নিঃশেষ করতে পারতেন না।। দেশের জ্ঞানী গুণিজনেরা যদি স্বাস্থখাতের বাজেট নিয়ে কথা বলতেন, আমলাদের দূর্নীতি ও বানিজ্য নিয়ে সরব হতেন তবে আজ এই দশা হতো না।। মেডিকেল এর জিনিস পত্র কেনায় যেই লুটেরা চক্র জড়িত সাংবাদিকরা যদি তাদের মুখোশ উন্মোচন করে যেতেন নিয়মিত, তবে তারা এতটা বাড়তে পারতো না। ভুলে গেছেন পাবনার ডিসি রেখা রানী বালোকে উনার বাংলোতে দেখতে না যাওয়ার অপরাধে একরাতেই ওএসডি করেছিলো পাবনা সদর হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক ডাঃ মঞ্জুরা রহমান কে ক্ষমতার নগ্ন দাপট দেখিয়ে,তখন প্রতিবাদ করেছিলেন?? কখনো উপজেলা হাসপাতালে গিয়ে জানতে চেয়েছেন কি কি ব্যবস্থা নিলে চিকিৎসা সেবা উন্নত করা যায়?
আপনাদের ভোটে নির্বাচিত এমপি মহোদয় মাসিক মিটিংয়ে জানতে চেয়েছেন দরদ নিয়ে কি কি ব্যবস্থা নিলে আপনারা ভোটার, জনগন সুচিকিৎসা পাবেন??
কখনো এমপি সাহেবকে জিজ্ঞেস করেছেন,কেন আপনার উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ঘাটতি,কেন এম্বুলেন্স নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে,কেন এক্সরে মেশিন বাক্সবন্দি থাকে,কেন আলট্রাসনোগ্রাম হয়না,কেন উপজেলায় প্যাথলজি ল্যাব নেই, কেন ওটি হয়না? কেন হাসপাতালের সরকারি মেডিসিন বাইরে বিক্রি হয়?? নাগরিক হিসেবে আপনার মৌলিক অধিকার চিকিৎসা পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য এমপি সাহেবের পথ আগলে দাঁড়িয়েছেন কখনো??যেই চোটপাট পাতি নেতা, নেতার শালা হয়ে চিকিৎসকদের সাথে দেখিয়েছেন, চিকিৎসকদের মেরেছেন,অপমানিত করেছেন,আক্রান্ত করেছেন, ক্লাস এইট পাশ সাংবাদিক লেলিয়ে দিয়েছেন,সেই চোটপাট কখনো আপনাদের প্রতিনিধিকে করেছেন??? করবেন কিভাবে তা জানি।
আপনারা মেরুদণ্ডহীন। তাই দূর্বল পেশাজীবী চিকিৎসকদের সাথে মাস্তানি করেই নিজের ক্ষমতা জাহির করে গেছেন।।আপনারা বলতেন,আইসিইউতে মরা মানুষ জীবিত করে রাখে বোগলে রসুন দিয়ে,গরুর সুই দিয়ে ছিদ্র করে। এখন তবে কেন আইসিইউ আইসিইউ মাতম করছেন? যারা নিয়োগ বানিজ্য, প্রমোশন বানিজ্য, দলীয় অনুগত নিয়োগ, কমিশন ও সিন্ডিকেট গড়ে তুলে এই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বলাৎকার করে গেছে প্রতিনিয়ত তাদের নিয়ে যদি একটু সোচ্চার হতেন,সাংবাদিকরা যদি তাদের চেহারা উন্মোচন করতো, আদালত যদিস্বঃপ্রণোদিত হয়ে কয়েকটা রুল জারি করতো, সরকারকে যদি লুটেরাদের সহযোগী না হয়ে তাদের লাগাম টেনে ধরতে বলতেন,তবে আজ এমন পানিতে পড়ে যেতে হতো না।।
কারা সরকারী চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা জিইয়ে রেখে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক গুলোকে লাগামহীন বানিজ্য করার সুযোগ দিছে? আজ কেন বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা এড়িয়ে যায়?? দেশে এত এত মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দিয়ে কারা হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন?? যখন নেতারা,আমলারা তাদের ত্যাগকৃত বায়ুর গন্ধের তারতম্যের জন্য বিদেশ ছুটে যেতেন,তখন তাদের টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন??
একটা ভঙ্গুর ব্যবস্থাকে এই দেশের কসাইকুলরা টিকিয়ে রেখেছিলো এত বলাৎকারের ভেতরে এতদিন,যা কোভিড ১৯ দেশে এসে তার বিবস্ত্র অবস্থা প্রকাশ করলো শুধু।। জনগন যেমন, তার শাসক ও তেমন ই হবে। আপনারা জবাবদিহিতা চাননি,উনারা নীরবে সুইস ব্যাংকের একাউন্ট ভরেছেন। একটা সিস্টেম উন্নয়নে তার সমস্যা গুলোর গভীরে যেতে হয়। সেখানে কি কি প্রতিবন্ধকতা তা জানতে হয়। সীমিত সামর্থ্য দিয়েও ভালো চিকিৎসা দেওয়া যেতো,ভালো সিস্টেম গড়ে তোলা যায় যদি লুটপাট না হতো।। যদি ডাক্তারদের পিছনে না লেগে সিস্টেমের উন্নতি চাইতেন,  তবে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এর নিষ্পত্তি যেমন হতো,একটা কার্যকর চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠতো। ব্যক্তি চলে যেতে পারেন কিন্ত সিস্টেম গড়ে উঠলে তা কার্যকরভাবেই সেবা নিশ্চিত করতে পারে।
এখন সয়ে যেতে হবে। কিছুই করার নাই।। বিনা চিকিৎসায় প্রিয়জন হারানোর ব্যাথা সয়ে যেতে হবে।।
এটাই আপনাদের কর্মফল।। তবে আজকের হাহাকার ও আহাজারি যদি না ভুলে যান,যদি নিজেদের ভুল ও সিস্টেম এর সমস্যা বুঝতে পারেন, যদি নাগরিক হিসেবে দায়িত্বশীল হন, যদি নিজের অধিকার আদায়ে সাহসী হন, যদি স্বাস্থখাতের চোর,দালাল,লুটেরাদের ধাওয়া দিতে পারেন,তবে আগামীর বাংলাদেশ এর চিকিৎসার চেহারা অন্যরকম হবে নিশ্চিত জানবেন।

২টি মন্তব্য: