মজা সহ্য করার ক্ষমতা না থাকলে অন্যর সাথে মজা করতে যেও না

ভারতে “ইশ্ক” নামে একটি সিনেমা রয়েছে যেখানে একটি অংশে জুহি চাওলা বেশ ভয়ংকর রকম একটি মজা করে আমির খানের সঙ্গে। আমির খানও তার প্রতিশোধ হিসেবে জুহি চাওলাকে ভুত সেজে ভয় দেখায়। জুহি চাওলা বেশ মারাত্মক ভয় পেয়ে যায় এবং যখন বুঝতে পারে ভুতটি আমির খান, তখন আমির খানকে থাপ্পড় মেরে বসে। এই দৃশ্যে কাজল তখন চমৎকার একটি কথা বলে। “মজা সহ্য করার ক্ষমতা না থাকলে কখনও অন্যর সাথে মজা করতে যেওনা” আমরা এই মজা করার মাত্রাটি অনেক সময়ই বুঝতে পারিনা। বুঝতে পারিনা, কোথায় আমাকে থামতে হবে। আর মজার বিষয়টি যদি অনলাইনে হয়, তখনতো সব রকম মাত্রাকে অতিক্রম করে ফেলি। বন্ধু বান্ধবের মধ্য মজা থাকবেই, কম বেশি একজন আরেকজনকে পঁচাবে। এই টুকু মজা করার অধিকারের জন্যইতো সে বন্ধু। কিন্তু অনেক সময় হয় কি, আমরা মজার লাইনটি ক্রস করে ফেলি। যেখানে সেখানে, যার তার সামনে পঁচায়। ঘন্টার পর ঘন্টা পঁচায়। এবং পঁচিয়ে মনে করি যে, আমি বেশ স্মার্ট, আমার সাথে কথায় কেউ পারেনা। কিন্তু এটা ভাবিনা যে, আরেকজনকে পঁচিয়ে স্মার্ট হওয়া যায়না। বরং আরেকজনের প্রতি আমার ভালবাসা, সম্মানই আমাকে স্মার্ট করে তোলে। একবার দেখেছি, এমন একজন যে সব সময় পঁচিয়ে বেড়ায়, তার সাথে কথায় কেউ পারেনা সেও যখন দল বেঁধে অন্যর পঁচানোর শিকার হয় তখন আর সে নিতে পারেনা। তখন সে বন্ধুদের সাথে গন্ডগোল করে বসে, দুরত্ব তৈরি হয়। তাই মাত্রাটি বোঝা উচিত। বোঝা উচিত কোথায় গিয়ে থামতে হবে। বুলিং একজন মানুষকে মারাত্মক রকম ভাবে আঘাত করে। শরীরের আঘাত একটি সময় সেরে যায়। কিন্তু মনের আঘাত সহজে যায়না। সকলের সহ্য শক্তি এক রকম না। আমাদের এখানে অনলাইনে মারাত্মকভাবে বুলিং করা হয়। বুলিং এর একটু সুযোগ পেলে দলবেঁধে নেমে পড়ি। কারো কাজ হাস্যকর বা সমালোচনার মত, আমি সুন্দরভাবে সেটার সমালোচনা করতে পারি। কিন্তু নোংরা ভাবে বুলিং করা কেন? ফেসবুক, ইউটিউব বা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সকলের একই স্বাধীনতা। কিন্তু সকলের একই শিক্ষা না। ঢাকার একজন ছাত্রর শিক্ষা বা সমাজের সাথে, কোন চরাঞ্চলের শিক্ষা বা সমাজের বিস্তর ফারাক রয়েছে। অথচ চরাঞ্চলের মানুষটির কাছেও রয়েছে আপনার মত ফেসবুক। তার হয়ত সেই বোধগম্যটুকুই নেই যে, সামাজিক সাইটটি কিভাবে ব্যবহার করবে। তাই বুলিং করার চেয়ে, ভালভাবে ভুলটুকু ধরিয়ে দেয়া শ্রেয়। আবার শহরের মানুষও দেখি, দিনের পর দিন বুলিং করে। বিশেষ করে কোন সেলিব্রিটিকে দলবেঁধে বুলিং করে, এবং এই বলে যে, সেলিব্রিটিদের বুলিং করা জায়েজ। আমিও একমত সেলিব্রিটিরা একটু বেশিই সমালোচনার শিকার হবেন, তাদের সহ্য ক্ষমতাও বেশি থাকবে। কিন্তু সমালোচনার নামে এখানে নোংরা ভাবে বুলিং করা হয়। আমরা গঠনমুলক সমালোচনা ও বুলিং এর পার্থক্যই বুঝে উঠতে পারিনা অনেক সময়। আমি যথেষ্ট পরিণত মানুষ, এত বছর পেইজ চালিয়ে মানুষের নোংরা গালাগালি পেয়ে এখন সহ্য শক্তি হয়েছে। এখন কিছু মনে হয়না। এক চোখ দিয়ে দেখে আরেক চোখ দিয়ে বের করে দিই। কেউ নোংরা গালাগালি করলে ভাবি, আমাজন থেকে এসেছে, বানর থেকে এখনও পরিপুর্ণ মানুষে রুপান্তরিত হতে পারেনি। তাই তখন কিছু মনে হয়না। এত সহ্য শক্তি থাকার পরেও, কালে ভদ্রে একটু মন খারাপ হয়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষেরই এত সহ্য শক্তি নেই। আমি যে গালাগালি পেয়েছি অনেকে তার সিকিভাগ পেলেও, এই পেইজ চালানোর মত মানসিকতা থাকতো না। একটা বিষয় প‌রিস্কার হওয়া উচিত, আমি এমন কথা কেন বলব, যে কথায় মানুষ আঘাত পাবে? চেষ্টা থাকা উচিত মানুষ যেন আমার কথায় আনন্দ পায়। আর সুন্দর কথা বলাওতো একটি শিল্প। আমি কেন শিল্পের চর্চা করবো না? আসুন সহনশীল হই। সমালোচনা করি, কিন্তু বুলিং এর পথ না ধরি। বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে, একটি বাচ্চা মেয়ে বুলিং এর দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। বিজ্ঞাপনে এটি বোঝানো হচ্ছে, বুলিং শারিরীক আঘাতের চেয়ে কম কিছু না। আসুন এক সাথে বুলিং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন