প্লিজ জানুয়ারি থেকেই স্কুল খুলে দিন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিন। বাচ্চাগুলো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গেল!

জানুয়ারি থেকেই স্কুল খুলে দেওয়ার বিষয়ে আমি একটি স্ট্যাটাস দিয়েছি। বন্ধুরা অনেকেই আমার সাথে একমত হতে পারেন নি। তাদের উদ্বিগ্নতার জবাবে আমি একটি মন্তব্য করেছি। মন্তব্যটি দীর্ঘ হওয়ায় এখানে পোস্ট করা হলো। “আমি পরিবারসহ কোভিড ১৯ আক্রান্ত হয়েছিলাম। প্রথমে আমি আক্রান্ত হই। আমার জ্বর ঠান্ডা বা খারাপ লাগা যে করোনার কারণে, সেটি আমি বুঝতে পারি জ্বর শুরুর পাঁচ দিন পরে, যখন জ্বর আর নেই, কিন্তু খারাপ লাগা ও দুর্বলতা আছে। এটি বোঝার আগেই পরিবারের অন্যরা আক্রান্ত হয়ে গেছে। তারমানে, বাহক ছিলাম আামি। আমার থেকে আক্রান্ত আমার স্ত্রী এবং দুই বাচ্চা। এখন আপনি বলেন, বাচ্চাদের ঘরে রেখে কি তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে বাাঁচাতে পেরেছি? (এখানে আরো বলে রাখি, আমি এবং আমার স্ত্রী করোনার জন্য যে অসুবিধাগুলো ভোগ করেছি, বাচ্চারা কিন্তু তা করে নি। তাদের সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক, উপসর্গুলোও দ্রুত নিরাময় হয়ে গেছে- বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি একটি লক্ষণীয় দিক।) সেদিন মিরপুর ১১ নম্বরে দুইটি বুফে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম খোঁজ নিতে। গিয়ে দেখি প্রচণ্ড ভীড়। (এটিই এখন সব রেস্টুরেন্টে স্বাভাবিক চিত্র)। নারী-পুরুষের সাথে অসংখ্য শিশু। বুঝতেই পারছেন, সেখানে সাবধানতা দূরের কথা, কারো মুখে মাস্ক পর্যন্ত নেই। নেই, ন্যুনতম দূরত্ব। যেই ভীড় দেখেছি, কাঙালি ভোজেও এরকম ভীড় হয় না। যদি শিশুদের, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যই স্কুল বন্ধ থাকবে, তাহলে শুধু স্কুল কেন? সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট, গণপরিবহনে ঠাসাঠাসি যাত্রী বহন করা, হাট-বাজার - এই সব কিছুই বন্ধ করতে হবে, কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এসবের শৃঙ্খলা। কোথাও তো তা নেই। সব ক্ষেত্রেই তো নিয়ম উধাও বা শিথিল। চারদিকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণহীনভাবে খুলে দিয়ে, শুধু স্কুল বন্ধের ফলাফলটা কী - বলেন আমাকে? স্কুল বন্ধের ভালো দিক যদি করোনার বিস্তৃতি রোধ করা হয়, তাহলে বলব, সেটি করতে অনেক আগেই বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো স্কুল কলেজ বন্ধ রেখে এদেশের লক্ষ লক্ষ শিশুর শিক্ষা জীবন শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ শুধু শহরের মায়েদের তুলতুলে ননী খাওয়া বাচ্চাদের না। সবাই টাকাওয়ালা ধনী আভিভাবকের বাচ্চা না। শহরের অনেক বাচ্চাই অনলাইনের সুযোগ পেলেও গ্রামের দরিদ্র শ্রেণীর শিশুরা তা ভাবতেই পারে নি। গ্রামের শতকরা আশি ভাগ বাচ্চা গত মার্চের পরে বই হাতেও ধরে নি। স্কুল খোলা নেই মানেই গ্রামের বাচ্চাদের পড়াশোনা নেই। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর যে ক্ষতিটা হয়ে গেল, তার ভার কীভাবে বইবে ভবিষ্যৎ? স্কুল বন্ধ না রেখে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সীমিতভাবে তা চালানো যায়, সেই ব্যবস্থা করা যেত। প্রয়োজনে একেক শ্রেণীর সপ্তাহে দুই দিন করে ক্লাস হতো, পরীক্ষাগুলো হতো, তবুও চর্চাটা নষ্ট হতো না। আমিও চাইব না বাচ্চারা ক্ষতিগ্রস্থ হোক, কারো মায়ের বুক খালি হোক। কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন করেই স্কুল-ক্লাস চালু রাখা যেত। পরীক্ষা নেওয়া যেত। আমাদের সরকার যেহেতু প্রকৃতপক্ষে করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে। করোনা-বাণিজ্য, লুটপাট ঠেকাতে পারে নি। প্রকৃতপক্ষে জনগণের জন্য করোনার চিকিৎসা সুলভ করতে পারে নি, তখন উচিৎ ছিল, শিক্ষার পরিবেশটা কীভাবে ঠিক রাখা যায় সেটি চিন্তা করা। আমাদের একটি কার্যকর সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। নিশ্চয়ই অনিশ্চিত সময়ের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা কোনও সুফল বয়ে আনবে না। একটি মানব সন্তান, তার মানুষিক দিয়ে সবচেয়ে স্পর্শকাতর মুহুর্তটি পার করে বয়:সন্ধি কালে/টীনএজ বয়সে । হাইস্কুলের ছাত্র/ছাত্রী । আমাদের দেশে, নিজ ঘর থেকে- সংসদ ভবন পর্যন্ত, কোথাও কেও ভাবে না । স্টাডিও নাই । এই নতুন প্রজন্মকে কোরোনা আতঙ্কে- আতঙ্কিত ভীতু না বানিয়ে, মানে- ঘরে আটকে না রেখে, প্রয়োজনীয় সতর্কতার নির্দেশ আর ডিসিপ্লিনের সাথে স্কুল খুলে দিক । কোরোনা যোদ্ধা হিসেবে আগামি দিনে- সাহসী প্রজন্মের কাঁধে থাকবে দেশ । ভীতু ভেরার কাঁধে না । মানবসন্তান দুর্যোগ ভয় না পেয়ে ভয়কে জয় করেছে বলেই এতদূর এসেছে। ভয়কে জয় না করতে পারলে, দুর্যোগে গর্তে লুকালে মানব ইতিহাস এমন হতো না। অনেক আগেই মানব প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটত। দুর্যোগ ভয় পাওয়া মানবজাতির ধর্ম না। অথচ করোনার প্রতিরোধ ব্যবস্থার নামে আমরা সেই ভয়ের বীজটাই শিশুদের মনে গেঁথে দিলাম। বিপদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা শেখানোর একটি চমৎকার সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন