মহান মুক্তিযাদ্ধে সহোদর ভাইবোন একই সাথে যুদ্ধ করেছেন
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহোদর ভাইবোন একই সাথে অংশগ্রহন করেছেন এমন উদাহরণ খুব কমই আছে। আজ বলছি এক সহোদর ভাই বোনের কথা যাদের একজনের নাম মেজর এ,টি, এম হায়দার ( আবু তাহের মোহাম্মদ হায়দার – বীর উত্তম ) ভাই এবং তার বোনের নাম ডা. ক্যাপ্টেন সিতারা রহমান – বীর প্রতীক। মেজর হায়দার ১২ ই জানুয়ারী ১৯৪২ কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহন করেন। তত্কালীন পূর্ব পাকিস্থান সেনাবাহিনীর ৩য় কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের কর্মকর্তা হায়দার কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে পালিয়ে ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং শুরু থেকেই ২নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ এর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মেলাঘরে অবস্থিত প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে সকল মুক্তিযোদ্ধাকে কমান্ডো, বিস্ফোরক ও গেরিলা ট্রেনিং সহ হায়দার মুক্তিযোদ্ধাদের শপথ গ্রহণ করাতেন। মেলাঘরে মেজর হায়দার প্রথম একটি স্টুডেন্ট কোম্পানি গঠন করেন। এই কোম্পানিকে তিনিই ট্রেনিং প্রদান করতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত হন। সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ১৯৭৫ সালের সাতই নভেম্বর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জে জন্ম সিতারা বেগমের৷ বাবা মোহাম্মদ ইসরাইল এবং মা হাকিমুন নেসা৷ তবে বৈবাহিক সূত্রে তিনি সিতারা রহমান নামে পরিচিত৷ স্বাধিকার আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন সিতারা বেগম। এসময় তার বড় ভাই এ টি এম হায়দার ও সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন৷ মেট্রিক পাশ করার পর তিনি হলিক্রস কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা মেডিকেল থেকে পাশ করার পর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে লেফটেন্যান্ট হিসাবে যোগ দেন। ১৯৭০ সালের উত্তাল দিনগুলোতে সিতারা বেগম কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নিয়োজিত ছিলেন। সেই সময় তার বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা মেজর এ টি এম হায়দার পাকিস্থানথেকে কুমিল্লায় বদলি হয়ে আসেন।
১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিতারা ও তার ভাই হায়দার ঈদের ছুটি পালন করার জন্য তাদের কিশোরগঞ্জের বাড়িতে যান। কিন্তু সেই সময়ে দেশ জুড়ে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছে। হায়দার তার বোনকে ক্যান্টনমেন্টে আর ফিরে না যাবার জন্য বলেন। পরবর্তিতে তিনি তার বোন সিতারা, বাবা-মা ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে পার্শবর্তী দেশ ভারতে পাঠান। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য মেলাঘরে বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল নামে ৪৮০ শয্যার একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে শেষ বর্ষের অনেক ছাত্র সেখানে ছিলো। ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা সেক্টর-২ এর অধীনে সেখানের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। তাকে নিয়মিত আগরতলা থেকে ঔষধ আনার কাজ করতে হতো। হাসপাতালে একটি অপারেশন থিয়েটার ছিলো। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বাঙালি ছাড়াও সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর লোকজন চিকিৎসাসেবা নিত। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ডঃ সিতারা রেডিওতে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার সংবাদ শুনে ঢাকায় চলে আসেন। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে তার ভাই মেজর হায়দার নিহত হলে ডা. সিতারা ও তার পরিবার বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন।
তথ্যসূত্রের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ দশ দিগন্ত, ফ্রাঙ্কফুর্ট, জার্মানী। বাঙ্গালীয়ানা। উইকিপিডিয়া। কিশোরগঞ্জ ডট কম।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
We respect them
উত্তরমুছুন