কুড়িগ্রামের কৃতী সন্তান বীর প্রতীক তারামন বিবি
বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত একটি নাম তারামন বিবি। একটি বীরত্বপূর্ণ নাম। একই সঙ্গে একটি ইতিহাস। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় ভাবে কাজ করেছেন নানা ভূমিকায়।
১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রামের কোদালকাটিতে আব্দুস সোবহান ও কুলসুম বেওয়ার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তারামন বিবি। আরো ৭ ভাইবোনকে নিয়ে অভাবের সংসারে একটু সচ্ছলতার আসায় অন্যের বাড়িতে গৃহস্থালির ছোটখাটো কাজ করতেন শৈশব থেকেই।
১৯৭১ সালের চৈত্র মাসে আজিজ মাস্টার নামে একজন তাকে মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার মুহিবের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। হাবিলদার মুহিবের অনুরোধে তারামন বিবিকে তার বাবা-মা দশঘরিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে রান্নার কাজ করে দেওয়ার জন্য পাঠাতে রাজি হন। যদিও তৎকালীন পরিস্থিতিতে তারা কিছুতেই রাজি ছিলেন না তারামন বিবিকে সেখানে পাঠাতে।
কিছুদিনের মধ্যে মুহিব তাকে অস্ত্র চালনা করা শেখালেন যাতে তিনি সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে পারে। ১৪ বছরের এই কিশোরী বুঝতেই পারেননি যে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে।
১৯৭১ সালের শ্রাবণ মাসের কোনো এক বিকেলে তারামন বিবি পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম অস্ত্রধারণ করেন। পাক বাহিনী গান-বোট নিয়ে হঠাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে আক্রমণ করলে অনেকটা আকস্মিকভাবেই তিনি অস্ত্র তুলে নেন।
এরপর তিনি ১১ নাম্বার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার বীর উত্তম আবু তাহেরের নেতৃত্বে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে আরো অনেক মুখোমুখি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। যুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের সরকার তার সাহসিকতার জন্য ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের পর হঠাৎ করেই তিনি প্রায় নিখোঁজই হয়ে যান। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের একজন শিক্ষক তাকে খুঁজে বের করেন। তারামন জানতে পারে তিনি ছিলেন বীর প্রতীক সম্মানধারী একাত্তরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ভোরের কাগজ তার সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বিষয়টি সবার নজরে আসে।
অবশেষে স্বাধীনতার ২৪ বছর পর ১৯৯৫ সালে বীর এই নারী তার বীরত্বের স্বীকৃতি পান ১৯ ডিসেম্বর। ঐ দিন তৎকালীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে পুরষ্কার তুলে দেন। তারামন বিবিকে নিয়ে আনিসুল হকের লেখা বই ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’। যা পরবর্তীতে নাট্যরূপ দেওয়া হয় ‘করিমন বেওয়া’।
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ এই বীর মুক্তিযোদ্ধা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে রাজিবপুর উপজেলার কাচারিপাড়া তালতলা কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়।
তথ্য সূত্রঃ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, উইকিপিডিয়া,
মুস্তাফিজ শাফি সম্পাদিত ‘একাত্তরের বিজয়িনী’ গ্রন্থ।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Respected madam
উত্তরমুছুন